মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

হাফেজের মর্যাদা সবার ওপরে

মাওলানা হাফেজ আল আমিন সরকার:
কোরআন মহান আল্লাহর কালাম বা কথামালা। আল্লাহর কালাম মুখস্থ করা কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়। এটি একজন মুসলমানের জন্য মহামূল্যবান সম্পদ। জান্নাতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য সব মুসলমানের উচিত সম্পূর্ণ কোরআন অথবা অংশবিশেষ মুখস্থ করা। এ জন্য বয়সকে কোনো বাধা মনে করা যাবে না। জীবনের শুরুর দিকে যেমন কোরআন হিফজ করা যায়, তেমনি জীবনের শেষ বেলায় এসেও হাফেজ হওয়া যায়। হাফেজ হওয়া আসলে ইচ্ছের ব্যাপার। আপনি নিয়ত করলেই আল্লাহ সহজ করে দেবেন। কেননা কোরআন সংরক্ষণের কারণেই দুনিয়াতে অসংখ্য হাফেজ প্রয়োজন। তাই যে মন থেকে হাফেজ হতে চাইবে, মহান আল্লাহ অল্প সময়ে তাকে হাফেজ হিসেবে কবুল করে নেবেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনা (রহ.) বলেন, ‘ইহুদি-নাসারাদের ওপর তাওরাত ও ইঞ্জিল হেফাজতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যখন তারা তাদের কর্তব্য পালনে অবহেলা করে তখন এ গ্রন্থ দুটি বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে বিনষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে কোরআন সম্পর্কে সুরা হিজরের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ কোরআন আমি নাজিল করেছি, আমিই এটাকে সংরক্ষণ করব।’ সুতরাং এটি কখনো বিকৃত হওয়ার সুযোগ নেই।’ (তাফসিরে কুরতুবি)

কোরআন নাজিলের সময় থেকে আজ পর্যন্ত এর একটি হরফ এমনকি একটি নুকতা পর্যন্ত পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়নি। মহান আল্লাহর হেফাজতের কারণেই এমনটি হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে কোরআন হিফজ করার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সা.)-এর ঘোষণা অনুযায়ী কোরআনের হাফেজ মহান আল্লাহর পরিবারের সদস্য ও বিশেষ ব্যক্তি। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিছু মানুষ আছে যারা মহান আল্লাহর পরিবারভুক্ত। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা? তিনি বললেন, যারা কোরআনের রঙে রঙিন তারাই মহান আল্লাহর পরিজন ও বিশেষ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।’(মুসনাদে আহমদ)

হাফেজ শুধু নিজেই লাভবান হবেন তা নয়, বরং তার মাধ্যমে তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবও উপকৃত হবে। একজন হাফেজ দশজন জাহান্নামিকে জান্নাতে নেওয়ার মতো বিশেষ ক্ষমতা পাবে কেয়ামতের দিন। এজন্য শর্ত হলো, ওই হাফেজকে দৈনন্দিন জীবনে কোরআনে বর্ণিত হালাল-হারাম মেনে চলতে হবে। এমন হাফেজের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে, পাশাপাশি হিফজ করবে এবং এর যাবতীয় হালাল বিষয়কে হালাল, হারাম বিষয়কে হারাম হিসেবে মেনে চলবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। শুধু তাই নয়, তার পরিবারের এমন দশজন ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ কবুল করবেন যারা জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে।’ (তিরমিজি) মুমিন-মুসলমান মাত্রই জান্নাতে যাবে। তবে জান্নাতে সবচেয়ে ঈর্ষণীয় জায়গায় থাকবে কোরআনের হাফেজ। কেয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশ শেষে কোরআনের হাফেজকে প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াতের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদার আসনে সমাসীন করা হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে কোরআন পাঠকারীকে বলা হবে, পড়তে থাকো আর ওপরে চড়তে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে-সুস্থে তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করতে, সেভাবে তেলাওয়াত করো। তোমার তেলাওয়াতের শেষ আয়াতেই তোমার বাসস্থান নির্ধারণ হবে।’(সুনানে আবু দাউদ) এ হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, জান্নাতে হাফেজদের প্রাসাদ হবে ৬ হাজার ২৩৬ তলাবিশিষ্ট। হাফেজে কোরআন একটি আয়াত পাঠ করবেন আর জান্নাতের প্রাসাদে এক তলা ওপরে উঠবেন। এভাবে যত আয়াত পাঠ করবেন তত উঁচুতে হবে তার থাকার ঘর।

সর্বোচ্চ প্রাসাদের পাশাপাশি হাফেজদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন মারজান নামক নয়ানাভিরাম বিশেষ এলাকা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নদীর ওপরে মারজান নামক একটি শহর রয়েছে। যা স্বর্ণ-রুপা দিয়ে বানানো হয়েছে। ওই এলাকাটি কেবল কুরআনের হাফেজদের জন্য নির্ধারিত।’ (কানজুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল)

কোরআনের হাফেজের মর্যাদা কেবল আখেরাতেই নয় বরং দুনিয়াতেও তার জন্য রয়েছে সুন্দর চরিত্রের সার্টিফিকেট। হাদিস শরিফে হাফেজকে ফেরেশতার মতো পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনের হাফেজ, যিনি সবসময় তেলাওয়াত করেন, তিনি আমলনামা লেখার কাজে নিয়োজিত সম্মানিত ফেরেশতাদের মতো সম্মানিত ও পবিত্র। আর অতি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বারবার কোরআন তেলাওয়াত করে, তার পুরস্কার দ্বিগুণ।’ (সহিহ বুখারি)

কোরআনের হাফেজ মহান আল্লাহর এত প্রিয় এবং এত মাহবুব বান্দা যে, তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। ওই হাফেজ পরিবারের দশজন জাহান্নামিকে তো জান্নাতে নেবেনই, বিশেষ আয়োজনে হাফেজের মা-বাবাকেও মহান আল্লাহ সম্মানিত করবেন। সাহল ইবনে মুয়াজ আল জুহানি (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, কেয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে এমন মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে তাহলে তার আলো কত উজ্জ্বল হবে? তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন চমৎকার হবে তোমরা ধারণা করো!’ (আবু দাউদ)

এক বুজুর্গ প্রায়ই বলতেন, খাবার সুস্বাদু হওয়ার জন্য লবণ যেমন জরুরি তেমনি জান্নাতের জীবন আরও মজাদার করার জন্য একজন মুমিন-মুসলমানের কোরআন মুখস্থ করা তেমনি জরুরি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করার পাশাপাশি সেটার বিধান অনুযায়ী আমল করে জান্নাতে উঁচু মাকাম অর্জনের তওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION